“রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে” — টিউলিপ সিদ্দিক
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও রাজনৈতিকভাবে পরিচালিত অপপ্রচারের অভিযোগ তুলেছেন যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি ও সাবেক ‘সিটি মিনিস্টার’ টিউলিপ সিদ্দিক। তাঁর বিরুদ্ধে দুদকের এক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর তিনি এই অভিযোগ করেন।
গত বছর ছাত্র ও জনতার আন্দোলনের পর শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। এরপর তাঁর সময়কার দুর্নীতি নিয়ে বিস্তৃত তদন্ত শুরু করে দুদক। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে—অভিযোগ, তিনি প্লট বরাদ্দে অনিয়ম করেছেন।
লন্ডনের হ্যাম্পস্টিড অ্যান্ড হাইগেট থেকে নির্বাচিত এমপি টিউলিপ গত জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘সিটি মিনিস্টার’ পদ থেকে পদত্যাগ করেন, যখন বাংলাদেশে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছিল। গতকাল রোববার ঢাকার একটি আদালত তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে, যেখানে শেখ হাসিনাসহ মোট ৫৩ জনের নাম রয়েছে।
আজ সোমবার দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় টিউলিপ বলেন, “বাংলাদেশের কোনো কর্তৃপক্ষ আমার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেনি। পুরোটা সময় শুধু মিডিয়ায় আমার নামে ট্রায়াল চালানো হয়েছে। আমার আইনজীবীরা স্বপ্রণোদিত হয়ে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখেছেন, কিন্তু কোনো উত্তর মেলেনি।”
তিনি আরও বলেন, “এই অপপ্রচারে আমি গুরুত্ব দিতে চাই না। এটা পুরোপুরি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, শুধুই আমাকে হয়রানি করার জন্য। এমন কোনো প্রমাণ নেই যে আমি কোনো অনিয়ম করেছি।”
গ্রেপ্তারি পরোয়ানার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ চাইলে যুক্তরাজ্যের কাছে টিউলিপকে প্রত্যর্পণের আবেদন করতে পারে। তবে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ ‘২বি ক্যাটাগরির’ তালিকায় থাকায় প্রত্যর্পণের জন্য দেশটিকে প্রমাণসহ জোরালো যুক্তি উপস্থাপন করতে হবে।
টিউলিপের আইনজীবী সংস্থা স্টিফেনসন হারউড বিবিসিকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানায়, “দুদক গত কয়েক মাস ধরে গণমাধ্যমে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ ছড়িয়েছে। এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমরা লিখিতভাবে আইনগতভাবে এর মোকাবিলা করছি।”
এদিকে দুদক বর্তমানে শেখ হাসিনাসহ তাঁর পরিবারের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে বড় অঙ্কের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তদন্ত চালাচ্ছে। অভিযোগ, তাঁরা অবকাঠামো প্রকল্প থেকে ৩৯০ কোটি পাউন্ড আত্মসাৎ করেছেন। এসব অভিযোগের সূত্রধর শেখ হাসিনার বিরোধী রাজনীতিক ববি হাজ্জাজ।
এক মামলায় অভিযোগ রয়েছে, ২০১৩ সালে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের চুক্তিতে মধ্যস্থতায় যুক্ত ছিলেন টিউলিপ। অভিযোগ, চুক্তিতে খরচ বাড়িয়ে দেখানো হয়েছিল।
তবে দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেছেন, “এই তদন্তগুলো কাউকে টার্গেট করে করা হয়নি এবং অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন নয়। যথাযথ নথির ভিত্তিতে তদন্ত চলছে।” তিনি আরও বলেন, “টিউলিপ সিদ্দিকের উচিত বাংলাদেশের আদালতের সামনে এসে নিজেকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করা। আমরা তাঁকে দেশের আইনি সহায়তা নিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।”
0 comments: