Tuesday, April 15, 2025

পাঁচ মাসে আড়াই শতাধিক জেলেকে তুলে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি

SHARE

 


নাফ নদীতে জেলেদের নতুন ভয়: পাঁচ মাসে দেড় শতাধিক অপহরণ, অভিযুক্ত আরাকান আর্মি


কক্সবাজারের টেকনাফে নাফ নদীতে মাছ ধরতে যাওয়াটা এখন জেলেদের জন্য বড় এক আতঙ্ক। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মি (AA) গত পাঁচ মাসে মাছ ধরতে যাওয়া অন্তত ১৫১ জন জেলেকে অপহরণ করেছে বলে জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর ক্রমবর্ধমান তৎপরতার কারণে টেকনাফের প্রায় ৪০০ ট্রলার মালিক ও তিন হাজারের বেশি জেলে মাছ ধরা বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে জেলে পরিবারগুলো চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ৫৮ দিনের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা সোমবার মধ্যরাতে শুরু হয়েছে। তবে তার আগেই আতঙ্কে মাছ ধরা বন্ধ করে দিয়েছেন স্থানীয় জেলেরা।

নাফ নদীর ৮৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গত তিন মাস ধরে আরাকান আর্মির টহল বেড়েছে। জলসীমা লঙ্ঘন করে তারা বাংলাদেশের সীমানায় ঢুকে ট্রলারসহ জেলেদের অপহরণ করছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
সর্বশেষ অপহরণ: সাগর থেকে ২৩ জন নিখোঁজ

৮ এপ্রিল সেন্ট মার্টিনের উপকূলীয় এলাকা মৌলভীরশীল থেকে চারটি মাছ ধরার ট্রলার ও ২৩ জন জেলেকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। এরপর থেকে টেকনাফের কোনো ট্রলার আর সাগরে নামছে না।

টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান জানান, গত ডিসেম্বরে মিয়ানমারের মংডু শহর দখলের পর থেকেই আরাকান আর্মির তৎপরতা বেড়েছে। এ পর্যন্ত তাদের হাতে অপহৃত ১৫১ জেলের মধ্যে ১৩৪ জনকে বিজিবির প্রচেষ্টায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। বাকি জেলেদের ফিরিয়ে আনতেও কাজ চলছে।

তিনি আরও জানান, ২৩ জন জেলে ও চারটি ট্রলার উদ্ধারে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। “দ্রুত ভালো খবর পাওয়া যাবে” বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
জেলেদের অভিজ্ঞতা ও পরিবারে আতঙ্ক

সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া কয়েকজন জেলে জানান, আরাকান আর্মি বলেছে, বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়তেই তারা অপহরণ করছে, যাতে একটি যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি হয়।

ট্রলার মালিকরা অভিযোগ করেছেন, আরাকান আর্মির সদস্যরা স্পিডবোটে করে বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে পড়ছে, অস্ত্র দেখিয়ে জেলেদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। বিজিবি মাঝে মাঝে উদ্ধার করলেও অপহরণ থেমে নেই।

সেন্ট মার্টিন উপকূল থেকে অপহৃত ২৩ জেলের মধ্যে শাহপরীর দ্বীপের আবদুল শুক্কুরের ট্রলারে ছিলেন ৫ জন, মোহাম্মদ শাওনের ট্রলারে ৬ জন এবং আবদুল হাকিমের দুটি ট্রলারে ছিলেন ১২ জন।

তাঁরা জানিয়েছেন, অপহৃতদের কোনো খোঁজ নেই। পরিবারগুলো আতঙ্ক আর দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে।
নিষেধাজ্ঞা শুরু, বাড়ছে দুর্ভোগ

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, রাখাইন রাজ্যে বিদ্রোহীদের দখলের পর নাফ নদীতে আরাকান আর্মি মাছ ধরা ও নৌযান চলাচলে নিজস্ব নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। জেলেদের সতর্ক করা হয়েছে যেন তারা মিয়ানমারের জলসীমায় না ঢুকে পড়ে।

১৫ এপ্রিল থেকে সরকারি নিষেধাজ্ঞাও শুরু হওয়ায় মোট ১০ থেকে ১২ হাজার জেলে পরিবার এখন আরও বড় সংকটে পড়েছে। মাছ ধরতে না পারায় বাজারেও সামুদ্রিক মাছের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

গত রোববার টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ও জালিয়াপাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, শত শত ট্রলার ঘাটে নোঙর করে পড়ে আছে। জেলেরা ভাঙা জাল ঠিক করছেন, কেউ কেউ অলস সময় কাটাচ্ছেন। সেন্ট মার্টিনেও কোনো নৌকা সাগরে যাচ্ছে না।



জেলেরা বলছেন, বেঁচে থাকার চেয়ে ফিরে আসাটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। সাগরে নামা এখন শুধু জীবিকার জন্য নয়, জীবনের ঝুঁকিও।
SHARE

Author: verified_user

0 comments: